1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

বৈদূর্য্য সরকার : সাহিত্য চেতনা



 উত্তরাধিকার

  • বৈদূর্য্য সরকার

***


তখন আমার আস্তানা জঙ্গলের ভিতর নদীর ধারের বাংলো । এক সন্ধেবেলা বারান্দায় বসে আছি । সামনে কুয়াশার চাদরে মোড়া অমাবস্যার জঙ্গল । কানে আসছে নদীর জলের আওয়াজ । অন্ধকারে ছুটে বেড়াচ্ছে লালচে কিছু বিন্দু... 

পড়ে বিশেষ কোনও প্রতিক্রিয়া হল না সুদীপের। দাদুর ওই বাউণ্ডুলে জীবনটা ওরা কেউই দেখেনি । শুনেছিল,  ঘর ছেড়ে নর্থ ইস্টের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবসা করে বিপুল লাভ করেছিলেন । সেই টাকাতেই পরে কলকাতায় জাঁকিয়ে বসেন । সোর্সটা যে ঠিক কী ছিল, জানতো না বাড়ির কেউ। একটু বেশী বয়সে থিতু হয়ে দাদু বিয়ে করেছিলেন ।     

১৯৭১-র ডায়েরি খুলে পড়তে শুরু করা একটা আকস্মিক ঘটনার পর থেকে । মিডিয়ায় কাজের সুবাদে প্রায়শই ওকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাভেল করতে হয় ।  বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা মিজোরামে এবার যেতে হয়েছিল। লোকজনের বিশ্বাস পঞ্চাশ বছর অন্তর সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় । বাঁশগাছে ফুল দেখা দিলে ।

প্রাথমিকভাবে যেটা জানা যায় – বাঁশের ফুল খেয়ে ইঁদুরের দল মারাত্মক উত্তেজিত হয়ে বংশবিস্তার করতে থাকে বিপুল হারে । সেই ইঁদুর বাহিনী আছড়ে পড়ে জমিতে গুদামে ঘরবাড়িতে । ফসলের ক্ষতি, মরা ইঁদুরের পচা দেহ থেকে দূষণ এবং মহামারী ।

সার্ভে করতে গিয়ে হঠাৎ এক বুড়োর মুখে সুদীপ ওর দাদুর নাম শুনে চমকে উঠেছিল। ছোট থেকেই শুনে আসছে – ওর সাথে দাদুর যৌবনের চেহারার আশ্চর্য মিল । কিন্তু সেটা যে বিদেশে এসে এর’ম পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে কোনওদিন ভাবেনি সুদীপ। আশ্চর্যের যেটা, ওখানকার প্রাচীন লোকের স্মৃতিতে এখনও দাদু রয়ে গেছেন । লোকটা বলেছিল, আপনার দাদু আমাদের বাঁচিয়েছিলেন । কিন্তু কীভাবে সেটাই কেউ মনে করতে পারছে না । বাঁশের ফুল দেখে যদিও লোকেরা বুঝতে পারছে, অচিরেই ঘনিয়ে আসছে মাওতাম । অভূতপূর্ব দুর্ভিক্ষ ।

দাদুর স্মৃতির কারণেই হয়তো বুড়ো লোকটা সুদীপকে ওদের উদ্ধারকর্তা  ভেবে বসেছিল বলেই, বাড়ি ফিরে চিলেকোঠার ঘরে স্তুপাকারে পড়ে থাকা দাদুর নানারকম জিনিসপত্র ঘেঁটে ডায়েরিটা পড়তে শুরু করেছে সুদীপ।  ডায়েরিটায় গল্পের অনেক উপাদান আছে । দাদুর একাকীত্ব, ওখানকার লোকেদের পোকামাকড় খাওয়া কিংবা ব্যবসা সংক্রান্ত কথাবার্তা পাওয়া গেলেও সুদীপ আসল জিনিসটা খুঁজে পাচ্ছিল না ।  

মাঝে কিছুদিনের পাতা ফাঁকা । তারপর চৈত্র মাসে একজায়গায় দাদু লিখছেন – অঞ্চলের রাজার থেকে পাওয়া উপঢৌকনের কথা । এমনকি সাধারণ মানুষরাও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা তার হাতে তুলে দিয়েছে। তখনকার হিসেবে ওই টাকা কম নয় । ডায়েরিটা শেষ হচ্ছে – প্রচুর টাকাকড়ি নিয়ে উনি ফিরে এসেছেন কলকাতায়... ।


বোকার মতো বসে রইল সুদীপ । বুঝতে পারলো না কিছু । তাহলে উপায়টা কী ! সে কল্পনা করল – তবে কি হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো গল্প !


হঠাৎ ডায়েরির মলাটের ভেতরটায় চোখ পড়ল সুদীপের । দাদু লাল কালিতে লিখে গেছেন, পঞ্চাশ বছর পরে বাঁশে ফুল ধরলে... না লেখা পাতাগুলোর খোঁজ যে করবে তাকে শিবনামের উত্তরাধিকার দিলাম !


সত্যিই কিছু কি জানতেন দাদু ? এই যোগাযোগটাই তো কাকতালীয় ! কিন্তু উপায়টা – সেতো কিছুই বোঝা গেল না । ‘শিবনামের উত্তরাধিকার’-র মানে কী  !

রাতে সুদীপ স্বপ্ন দেখলো - কলোনি ছেড়ে ইঁদুরের দল উঠে এসেছে । তাদের টানেলের মুখ পঞ্চাশ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কালক্রমে উন্মুক্ত হয়ে গেছে ।

সেদিন শিবরাত্রি । সকাল থেকে কাছের শিব মন্দিরে বেশ ভিড় । রাস্তাতেও নানারকম অস্থায়ী দোকান বসেছে । তাদের পশরা দেখেই সুদীপের মাথায় ঝিলিক দিয়ে গেল উপায়টা । বাংলার পথঘাটে হয়ে থাকা শিবের প্রিয় ধুতরা ফুলই হবে অস্ত্র । বিদেশ ঘোরা কিন্তু মনেপ্রাণে বাঙালি তার দাদু তাকে দিয়ে গেছেন ‘শিবনামের উত্তরাধিকার’ !

ওখানকার জঙ্গলেও সে ধুতরা দেখেছে অনেক । গ্রামের লোকেদের সবাইকে নিয়ে গোটা জঙ্গলে সেই ধুতরা ছড়াতে হবে । বিষে নিশ্চিত থমকাবে ইঁদুরের বাড়বাড়ন্ত ।

টিকিটের খোঁজ শুরু করলো সুদীপ ।


 

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন